পরীর প্রেম

বৃষ্টি ও প্রেম (সেপ্টেম্বর ২০২০)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • ১৬৭
ইউসুফ বুঝতে পারেনা সে রূপবান তাই তার নাম ইউসুফ রাখা হয়েছে নাকি ইউসুফ নবীর নামের বরকত তার রূপে প্রভাব ফেলেছে। এই হিসাব সে কিছুতেই মিলাতে পারেনা। তাই ইউসুফ নামের মানুষগুলোকে সে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে তাঁরা কতটা সৌন্দর্যের অধিকারী। তার দেখা সমস্ত ইউসুফ নামের মানুষগুলো কোননা কোনভাবে সুন্দর। তাই এসব নিয়ে সে আর মাথা ঘামাতে চায়না। কিন্তু না ভেবেও পারেনা ।
সবই ঠিকঠাক চলছিল। সত্তরের দশকের শেষ দিকে এইচ এস সি পাশের পর আর পড়াশুনা হয়নি কিছুদিন ব্যবসায় করে সুবিধা করতে না পেরে ঢাকায় একটা কোম্পানীতে চাকরি করছে মনোযোগ দিয়ে। ভালই দিন চলে যাচ্ছিল। কিন্তু একদিন অফিসে শেষ বিকালে সে তাজা ফুলের তীব্র ঘ্রাণ পাচ্ছিল-কিন্তু এই ঘ্রাণের কোন উৎস পাওয়া যাচ্ছিলনা। সেদিন থেকেই বিপত্তির শুরু।
এর সাপ্তা খানেক পরে অফিসের টেবিলের কিছু ফাইল ড্রয়ারে রেখে তার রুমের পিছনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখে মৃদু-মন্দ বাতাই বইছে। একটা গাছে দু’টি শাকিল মনের সুখে প্রেমালাপ করছে। একটি আরেকটিকে আদর করছে-এর মধ্যেই হঠাৎ সেই তীব্র ফুলের ঘ্রাণ। পাশফিরে টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দেখে-একতোড়া সদ্য বাগান থেকে তোলা ফুল। সে দারুণ বিষ্মিত হল। এত দ্রুত এখানে কে ফুল রেখে গেল?
পিয়নকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল-না তো স্যার এদিকে কেউ আসে নাই। অফিসের আরেক কলিগ তার রুমে এসে, ফুল দেখে বলল-এই অসময়ে আবার কে ফুল দিয়ে গেল আপনাকে। এমন আনকমন ফুলতো আর দেখিনি। ঘ্রাণটাতো একেবারে পাগল করা। কিরে ভাই প্রেমে-টেমে পড়েছেন নাকি ?
আরে না না। কি যে বলেন। এই বলে মৃদু হাসি দিয়ে সে দিন কলিগের কাছে থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। রাতে ইউসুফ শুয়ে শুয়ে ভাবছে ব্যাপারটা কি ? তার সাথে এগুলো কি ঘটছে। ভাবতে ভাবতে একসময় এমন একটা ভাবনা তার মনে এলো যা তাকে শিহরিত করে দিল। সে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ল।
এদিকে অফিসের প্রায় সবাই জেনে গেল- ইউসুফ এর রুম থেকে সবসময় ফুলের ঘ্রাণ ও ফুল পাওয়া যায়। এ নিয়ে কানাকানি শুরু হল। কিন্তু কেউ এই রহশ্যের কিছুই উদ্ধার করতে পারলনা। অফিস করা তার কাছে এক প্রকার আতঙ্ক হয়ে উঠল। একদিন রাতে সে অদ্ভুদ এক স্বপ্ন দেখল।
০২-পাতা
ইউসুফ সে রাতে দেখল-স্বপ্নের ভিতরেও সে অফিস করছে, তার রুমের জানালা দিয়ে কে যেন তাকে ডাকছে। সে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল-একটা সুন্দরী মেয়ের অবয়ব। সে চমকে যেতেই মেয়েটি বলে উঠল-ভয় পেয়না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবোনা। আমি মানুষ নই। আমাকে তুমি পরী বলতে পার। আমি তোমার ছোট কাল থেকেই সাথে আছি কিন্তু কখনো তা আমি বুঝতে দেইনি। তোমাকে আমার খুব ভাললাগে। আমি তোমাকে ভালবাসি। এখন থেকে তোমার সাথে মাঝে মাঝে দেখা করবো।
পরীর কথা শেষ হওয়ার পর সে যেইনা চোখের পলক ফেলেছে অমনি অবয়বটি বাতাসে মিলিয়ে গেল।
স্বপ্ন শেষ হওয়ার পর ইউসুফের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে শুনতে পেল কোথাও কারো বাসা থেকে পালা মোড়গের ডাক। ভোর হয়ে আসছে। হয়তো একটু পরেই আজান হবে। সে ভয়ে আর না ঘুমিয়ে ফজর নামাজের জন্য বসে রইল।

আজ যখন অফিসে কাজে ডুবে রইল তখন স্বপ্নের কথা ভুলে গেল। কিন্তু তার জন্য যে চমক অপেক্ষা করছে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানেনা। স্বপ্নে দেখা সেই বিকাল বাস্তব হয়ে দেখা দিল। এবং তার চোখের পলকে সব ঘটে গেল। সে ঘোর লাগা মানুষের মতই অফিস থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন হাটাহাটি করে বাসায় ফিরল।
এক রুমের ছোট্ট এক বাসা। তবে খুব সুন্দর করে সাজানো গুছানো। একাকীত্ব ও ভাবনার গভীরে সে হারিয়ে গেল। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে অঝোড় ধারায়। কিন্তু বৃষ্টির সে সৌন্দর্য দেখার মানসিকতা তার নেই। অগত্যা অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে সে গ্রামের বাড়িতে গেল।
মেঘনা নদীর পাড়েই তাদের গ্রাম। গ্রামটা সবুজে ছেয়ে আছে। ছেলেকে দেখে মা খুব খুশি হলেন কিন্তু ছেলের চেহারা দেখে তিনি অবাক হলেন। তার রূপবান ছেলের চোখের নীচে কালির দাগ। মহিল চাহনি। একি হল তার ছেলের!
মা-বাজান তোর কি হইছে ?
ইউসুফ- না মা তেমন কিছুনা। রাইতে খাওয়ার পর তোমারে সব খুইলা কমু।
রাতে খাবার খেয়ে ছোট ভাই-বোন দু’টি ঘুমিয়ে গেলে মার সাথে ইউসুফ গল্প করতে বসে। একথা সেকথা বলার পর মা জানতে চায় তার সমস্যাটা কোথায়।
মা-ঢাকা শহরে কি তোর খাওন-দাওনের অসুবিধা ?
ইউসুফ-না মা তা নয়। সমস্যাটা হচ্ছে প্যারানরমাল। মানে জ্বীন-ভূত জাতীয়।
মা-অ বুঝছি। তরেনা একটা দাবিজ দিছিলাম। তাবিজ কি হারায় ফেলছস ?
ইউসুফ- তাবিজ যে কোথায় হঠাৎ পরে গেছে তা বলতে পারবনা।
মা-এজন্যইতো তর এই সমস্যা দেহা দিছে।
০৩-পাতা

ইউসুফ-ক্যান মা, আমার লগেই ক্যান এই সব দেহা দিল।
মা-তুই জানসনা তোগো বাড়িতে অনেক আগে থেকেই জ্বীনের উৎপাত।
ইউসুফ-জানি মা কিন্তু আমার সাথে কেন নতুন করে এসব শুরু হল। আগেতো আছিলনা।
মা- তোর আগে জন্ম নেওয়া তোর ভাইডারেতো জ্বীনের জনর লাগনের কারণেই বাঁচাইতে পারলামনা। তুই যখন জন্ম নিলি তোরে দেইখাই মনে হইল-আমার এত সুন্দর পোলায় উপর যদি জ্বীনের নজর লাগে তয় আমার জীবন তামা তামা। আমি সেই থাইকা হুজুরের তাবিজ তর হাতে বাইন্দা দিছি। আর না বেধেও উপায় ছিলনা। সেই সময়টাতে জ্বীনের উৎপাত আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এখন তোর কাছ থেকে তাবিজ হারিয়ে যাওয়াতে তোরে জ্বালাতন করে। তুই কোন চিন্তা করিসনা বাজান। আমি আবার একটা তাবীজ তোর হাতে বাইন্দা দিব।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেই হুজুর মারা গেছেন। এখন কি উপায় হবে ? মায়ের ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
ইউসুফ জরি নামের তার বাল্য সখীর সাথে দেখা করতে তাগো বাড়ি যায়। সেখানে জড়ির বাপের সাথে দেখা হতেই তিনি বলেন-
আরে ইউসুফ অনেকদিন পরে তোমারে দেখলাম তা বাবা কেমন আছ ?
এইতো চাচা ভাল।
না তুমি ভাল নাই। আমি জানি কোন একটা জ্বীন তোমারে সমস্যায় ফেলতাছে।
ইউসুফ অবাক হয়ে যায় জরির বাবার কথা শুনে। উনি কি করে যানলেন ?
তুমি হয়তো জাননা আমি কবিরাজী করি। মানুষের চোখ-মুখ দেইখা অনেক কিছু বুঝতে পারি। তোমারে যে জ্বীনটা ধরছে সে মেয়ে জ্বীন যাকে আমরা পরী বলে জানি। সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়। যতদিন তুমি কোন মেয়েকে বিয়ে-শাদী না করবে ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবেনা।
তোমার আর জরির বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়ে গেলে হাফ ছেড়ে বাঁচি। যাক বাবা আমি আছি তুমি কোন চিন্তা করনা।
তুমি এখানে আমার সামনে বস- আমি তোমাকে কিছু দোয়াকালাম শিখিয়ে দেই বিপদে পড়লে পড়বে। আর এই তাবিজ সাথে রাখবে দেখবে ঐ পরী তোমার কিছু করতে পারবেনা।
তাদের কথার মাঝে জরির মা নাস্তা নিয়ে এসে ইউসুফ ও তার মায়ের খোঁজ খবর করে। জড়ি ভিতর ঘর থেকে জানালা দিয়ে ইউসুফকে দেখে। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে-আহারে ইউসুফ কেমন শুকিয়ে যাইতেছে। বান্ধবীরা বলে-তোর ইউসুফতো নায়কের চেয়েও সুন্দর। সে কথা শুনে জরির মন ভরে যায়।
বাবা-মা চলে গেলে জরি ইউসুফ এর সামনে এসে বলে- কেমন আছ ?
০৪-পাতা

ভাল আছি।
তুমি কেমন আছ জরি?
ভাল। তবে তোমার চিন্তায় আর ভাল থাকা যায়।
চিন্তা কইরনা। আমরা দ্রুতই সংসার শুরু করুম।
জড়ি লজ্জা পায় এ কথা শুনে। ইউসুফ একসময় বিদায় নিয়ে বাড়ি আসে। পরের দিন আবার ঢাকা চলে যায়। যথারীতি আবার অফিস আবার ব্যস্ততা। প্রথম দিন কোন সমস্যা ছাড়াই অফিস করল ইউসুফ। পরীর কথাও মেন এলনা। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকেই আবার সেই যন্ত্রনা শুরু। বিকেলে সেই তীব্র ফুলেল ঘ্রাণ। শেষ বিকেলে যখন অফিসপাড়া নিরব নিস্তব্ধ তখনই জানালায় হাজির পরী। খিল খিল হাসিতে চমকে উঠে ইউসুফ।
পরী বলে-
তাবিজ কবজ দিয়ে আমারে আর দূরে রাখতে পারবেনা। সেই হুজুর মারা গেছে। এখন আমি মুক্ত। তুমিও যুবকে পরিনত হয়েছে। আর কোন বাঁধা নেই। আমি তোমাকে চাই ? হা.হা. হা.
কথা ও হাসি শুনে ইউসুফ মুখ শুকিয়ে যায়। সে পরিমরি করে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

সাপ্তাহিক বন্দের দিন বিকারে পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছে ইউসুফ। গাছ-পালা, ফুল-পাখি, মানুষজন দেখে বেশ সময় কাটছে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে লোকজন বেরিয়ে যাচ্ছে পার্ক থেকে। একটা সুন্দর প্রজাপতি এসে তার কাধে বসল। আবার উড়ে চলে গেল নির্জন জায়গার দিকে। ঘোরলাগা মানুষের মত ইউসুফও প্রজাপতির পিছনে পিছনে চলছে-
হঠাৎ সেই ঘ্রানে থমকে দাড়াল। চারপাশে চেয়ে দেখে কেউ নেই- সে একা। তার কিছুটা ভয় করতে লাগলো। একটা গরম বাতাস এর ঝাপটা তার শরীরে লাগলো । সে সামনে পা বাড়িয়ে পিছনের দিকে চাইতেই চোখের পলকে পরীটা এসে হাজির। পরীর চেহারায় আজ আর নেই হাসি। চোখে কেমন আগুন জ্বলছে। একটা বিকট আওয়াজে পরীটা বলছে- আজ তোকে নিয়ে যাব আমার সাথে। আমার দেশে। আর কোনদিন ফিরে আসতে পারবিনা। পরী হাত বাড়িয়ে ইউসুকে স্পর্শ করার আগেই ইউসুফ দোয়া পড়ে একটা বৃত্ত একে তার মধ্যে দাড়িয়ে গেল। এবার পরী আর তাকে স্পর্শ করতে পারছেনা। বৃত্তর ভিতরেও ঢুকতে পারছেনা। বাহিরে দাড়িয়ে আস্ফালন করছে-দেখি তোকে কে আজ রক্ষা করে?
অনেকক্ষণ ধরে ইউসুফ একজায়গায় দাড়িয়ে আছে । দোয়া দুরুদ পড়ে যাচ্ছে সমানে। পরীটা অনেক ধরনের কথা বলছে-
আরে তুমি ভয় পেয়েছ ? আমিতো তোমার সাথে দুষ্টমি করছিলাম। আমি তোমার ছোটকাল থেকেই তোমাকে ভালবাসি। ঐ হুজুরটার কারণে এতদিন তোমার সামনে আসতে পারিনি।

০৫-পাতা
তোমাকে পরীস্থানে নিয়ে যাব। দেখবে কত সুন্দর আমাদের দেশ, আর ফিরে আসতে মন চাবেনা।
ইউসুফ বলে চলেছে-যতকিছুই বলনা কেন আমি যাবনা। আমি তোমাকে ভালবাসিনা। আমি মানুষ তুমি জ্বীন। মানুষ আর জ্বীনের মধ্যে ভালবাসা হতে পারেনা, বিয়ে হতে পারেনা।
পরী-কেন পারেনা ? আমি তোমাকে বিয়ে করবই।
ইউসুফ- না তা হতে পারেনা। আমি মাটির মানুষ তুমি আগুনের জ্বীন । কি করে তা সম্ভব।

এভাবে কথপোকথন চলতেই থাকে। পার্কের পাশ ঘেসে রাস্তা দিয়ে যানবাহন ও অনেক মানুষ হেটে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ ইউসুফকে খেয়াল করছেনা। অন্ধকারের ডানায় ভর করে রাত নামছে। ইউসুফ এবার জোড়ে জোড়ে চিৎকার করছে, হাত নাড়ছে- কেউ আছেন, আমাকে সাহায্য করুন। কেউ কি আছেন আমাকে সাহায্য করুন।
রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে একজন লোক অনেকক্ষণ থেকে লক্ষ করছে-পার্কের ভিতর একটি ছেলে দাড়িয়ে আছে। সে একজায়গায় দাড়িয়ে কি যেন বলছে, মনে হচ্ছে কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু আশে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। লোকটি আরও একটু এগিয়ে গেলে শুনতে পেল-ছেলেটি সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করছে।
সাহসে ভর করে লোকটি একসময় ইউসুফ এর কাছে গিয়ে বলল- কি হয়েছে তোমার ? এক জায়গায় এক ঘন্টার উপর দাড়িয়ে আছ ?
ভাই আগে এই গোলদাগটা কেটে দিন তারপর বলছি। লোকটি তাই করল। ইউসুফ মুক্ত হল। সে তার কাহিনী হাটতে হাটতে লোকটিকে বলতে লাগলো। ইউসুফ এর বাসা পর্যন্ত লোকটি এগিয়ে দিয়ে গেল। ইউসুফ তাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললনা।
পরদিন যাবনা যাবনা করেও অফিসে গেল সে। আজও সেই পরী তার সাথে দেখা করেছে । আজ সে অনেক দামী হীরা, রতœ, যহরত পরে এসেছে। তারদিক থেকে চোখ ফেরানো সহজ নয়। কিছুতেই পরী তার পিছু ছাড়ছেনা।
অফিসের বস ইউসুফকে ডেকে পাঠালেন। তিনি বললেন- ইউসুফ সাহেব আপনাকে নিয়ে কানা-ঘুষা চলছে। ব্যাপারটা কি বলুনতো।
ইউসুফ নির্ভয়ে সব খুলে বলল। সব শুনে বস বলল- আপনি দ্রুত বিয়ে করুন। টাকা পয়সা যা লাগে অফিস থেকে লোন নিন। আমি ক্যাশিয়ারকে বলে দিচ্ছি। নতুবা বড় ধরনের ঝামেলায় জড়িয়ে যাবেন। যা আমাদের জন্য কাম্য নয়।

অফিসের থেকে লোনের টাকা উঠিয়ে মাকে টাকা ও চিঠি পাঠাল বিবাহের বন্দবস্ত করার জন্য। আর এদিকে দিনের পর দিন পরীর প্রেম নিবেনদ চলছেই। ইউসুফও কিছুতেই টলছেনা।
০৬-পাতা

চিঠি ও টাকা পেয়ে ইউসুফের মা জরির মা-বাবার সাথে দেখা করে পাকা কথা দিয়ে এলেন। অগ্রহায়ণের ১৮ তারিখ শুভ বিবাহের দিন ধার্য করা হলো।
একরাতে ভংঙ্কর স্বপ্ন দেখে ইউসুফের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে স্বপ্নে দেখল-
তার ও জরির বিয়ের পর রাতে বাসর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে সেই খাটের দিকে তাকালো দেখল খাটে দু’জন বসে আছে বৌ সেজে। একজন জরী ও অন্যজন পরী। সে বিমূরের মত দাড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ তারপর কোনকিছু বুঝার আগেই পরীর একটা হাত রারের মত বড় হতে হতে তার কাছে চলে আসল এবং তাকে টান দিয়ে পরীর দিকে নিয়ে যেতে থাকল- এমন সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভয়ে ইউসুফের গলা শুকিয়ে কাঠ। বাকি রাতে আর ঘুম হয়নি। এভাবেই উৎকন্ঠায় দিন কেটে যাচ্ছে। বিয়ের দিন ক্ষণ ঘনিয়ে এলে ইউসুফ অফিস থেকে ৭ সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ি ফিরার আগে অফিসের সবাইকে দাওয়াত দেয় সে।
বাড়িতে আনন্দের হাওয়া বইছে। ইউসুফ এর ভাই-বোন দু’জনই খুশী জরির মত সুন্দর মেয়ে তাদের ভাবী হবে।
গ্রামের বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া, বাজার সদাই করা, ঘর ও আসবাবপত্র ঠিকঠাক করাসহ বিভিন্ন কাজে ইউসুফের দিন কেটে যায়। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় বর ও কনের বাড়িতে। কোন প্রকার উটকো ঝামেলা ছাড়াই শুভ বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বরযাত্রী বউ নিয়ে ফিরে আসে ইউসুফদের বাড়িতে। জরি চোখের জলে বুক ভাসায়। বাপের বাড়ি চিরতরে ছাইরা স্বামীর বাড়ি যাইতাছে বলে। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ইউসুফের ভাই-বোনেরা নয়া ভাবীর সাথে গল্প-গুজব করে, রাত বাড়লে যার যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়। ইউসুফ বাসর ঘরে ঢুকে দেখল জরি ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে আছে। সে দরজা বন্ধ করে খাটের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে জরির থেকে আরেকটু দূরে আরোও একজন বৌ সেজে বসে আছে।
ইউসুফ ভীষন চমকে যায়। সে স্থির দাড়িয়ে থাকে। তবে কি সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়ে দেখা দিল! স্বামীকে এভাবে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে দেখে জরি বলল-কি হয়েছে তোমার। সামনে আসতেছনা যে? জরির কথায় চমক ভাঙ্গে। দেখে খাটে শুধু জরিই আছে অন্য কেউ নেই। একটা পাথর যেন ইউসুফের কাধ থেকে নেমে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাষ ফেলে সে সামনে পা বাড়ায়। তারপর আলাপে, গল্পে, আদরে, ঘুমে রাত ভোর হয়।

বিয়ের পর সেই পরী আর দেখা দেয়নি। সে হয়তো চিরতরে পরীস্থানে চলে গেছে রাগ আর অভিমান নিয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৯৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪